তাহিরপুরের গ্রামে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করা হয়নি, গুজব বলছেন এলাকাবাসী
অনলাইন নিউজ ডেক্স
দেশের হাওরাঞ্চল ও সীমান্তঘেঁষা একটি গ্রামে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।স্থানীয় এক সংবাদকর্মী অতি উৎসাহী হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট দেখে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিকসা গ্রাম সম্পর্কে এমন গুজব ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ গ্রামবাসী।প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিকসা গ্রামে গেল শনিবার (১৭ আগষ্ট) রাতে গ্রামের সালিসী, মুরুব্বী, যুবক, শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে একটি বৈঠক হয়।গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে হওয়া ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়ানো হয়েছে।গ্রামের এক পক্ষ বলছে, বৈঠকে গ্রামে গানবাজনা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপর পক্ষ বলছে গানবাজনা নয়, শুধু সাউন্ডবক্স বাজিয়ে রাতে অহেতুক উচ্চ শব্দে গান বাজানো নিষেধ করা হয়েছিল। কারন এতে গ্রামের মানুষজনের ঘুমের যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, বয়স্ক নারী-পুরুষ উচ্চ শব্দের কারনে অস্বস্থির মুখে পড়েছেন, আবার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অমনোযোগীতার মুখে বেশ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।তাহিরপুর উপজেলা সদরের সন্নিকটে চিকসা গ্রামটিতে ৫০০ শতাধিকের বেশি পরিবারের সদস্যরা বসবাস করছেন। এর মধ্যে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনও সম্প্রীতি বাঁধনে মিলেমিশে বসবাস করে আসছেন যুগের পর যুগ ধরে।সোমবার সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চিকসা গ্রামের ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয় এমনকি স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর প্রকাশিত প্রতিবেদনেও এমন গুজব ছড়ানোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।সোমবার রাতে উপজেলার চিকসা গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের দুই-তিন দিন আগে থেকে সাউন্ডবক্স এনে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হয়। এতে বয়স্ক লোকজন, রোগী, শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়। স্থানীয় মানুষজন বিষয়টিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।তাহিরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম গেল শনিবার গ্রামবাসীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।শফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামে গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হয়নি, এসব অপপ্রচার করে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে একটি বিশেষ মহল।তিনি আরো বলেন, গ্রামের কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেই দুই-তিন আগে থেকেই সাউন্ডবক্স নিয়ে এসে উচ্চ শব্দে গান বাজানো শুরু হয়। অতিষ্ঠ গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে বিষয়টি মাসখানেক আগে থানা পুলিশকেও জানানো হয়েছে। গ্রামে ওরস, মাহফিল, বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে গানের আয়োজন বা সনাতন ধর্মের লোকজনের অনুষ্ঠানে হবে, এতে কোনো বাধা দেয়ার মত আলোচনাই বৈঠকে হয়নি।উপজেলার চিকসা গ্রামের আরেক বাসিন্দা ইমাম মাওলানা সফি উদ্দিন বলেন, বৈঠকে বিয়ের অনুষ্ঠানের দুই-তিন আগে থেকে উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স এনে কিংবা অহেতুক গানবাজনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত ছিল শুধু মুসলমান পরিবারগুলোর জন্য। গ্রামের হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কোনো অনুষ্ঠানে গানবাজনায় আপত্তি নেই বলেও বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।সোমবার রাতে তাহিরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, গেল শনিবার রাতে চিকসা গ্রামে গ্রামবাসীর বৈঠকে গানবাজনা নিষিদ্ধ করার মতো কোনো রকম সিদ্ধান্ত হয়নি। মূলত গ্রামবাসী সাউন্ড বক্সের অতি উচ্চ শব্দের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।সোমবার রাতে পরিবেশ ও মানবাধিকার উন্নয়ন সোসাইটির তাহিরপুর উপজেলা শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আহমেদ আরিফ বললেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, উপজেলার চিকসা গ্রামে গানবাজনা নিষিদ্ধ করার তথ্যটি সঠিক নয়, এটি স্রেফ গুজব।সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা পুলিশের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তাহিরপুরের চিকসা গ্রামে গান বাজনা বন্ধের মত কোন সিদ্ধান্ত নেননি গ্রামবাসী বরং এটি এক ধরনের গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে ধারণা করছি।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।