উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে হার্ডলাইনে বিএনপি


নীতিগত কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ইস্যুতে হার্ডলাইনে বিএনপি। এজন্য উপজেলা পরিষদের প্রথম দফার নির্বাচনে যারা দলীয় পদে থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দলের এমন নির্দেশনার কথা জানান। একই সঙ্গে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে অংশ নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও প্রার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। জানানো হয়, ভোটে গেলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার রাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেখানে বাকি ধাপের উপজেলা নির্বাচনে যাতে দলীয় কোনো নেতা অংশ না নেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেয় হাইকমান্ড। নির্দেশনা পেয়ে তারা কাজও শুরু করেছেন। এছাড়া দলীয় কোন্দল নিরসন, নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং, বিভাজন ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য রোধেও কঠোর হচ্ছে বিএনপি। মূল দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনে বিশৃঙ্খলাকারী নেতাদের লাগাম টেনে ধরতে চায় দলটি। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে চায় হাইকমান্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। আসন্ন উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো। নেতারা জানান, নির্দেশনা অমান্যকারী নেতাদের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে দলীয় ফোরামে। ইতোমধ্যে এমন সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলে। পাশাপাশি নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক পদধারী নেতাদের দেওয়া হয়েছে সতর্কবার্তা। কেউ যেন সরকারের ‘পাতানো ফাঁদে’ জড়িয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, সেজন্য তৃণমূলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বাড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে কিংবা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়টি বিএনপির গঠনতন্ত্রেই বলা আছে। কেউ দলীয় নির্দেশনা অমান্য করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাবে না, এটা অনেক আগে থেকেই বলা আছে। এটি দলীয় নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্ত। এমন বার্তা নেতাকর্মীদের জানানো হয়েছে। শুধু নির্বাচন ইস্যুতে নয়, দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত ভঙ্গ হলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে যেসব পদপদবিধারী নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নির্বাচনে অংশ না নিতে তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে মনোনয়ন দাখিলের কারণও জানতে চাওয়া হচ্ছে। মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও অনেকেই দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নিজ অবস্থান থেকে সরে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তবে কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে নেতাদের বহিষ্কার করবে-এমন বার্তা সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা বিভাগের গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিলকারী নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিএনপির সাংগঠনিক নেতারা যোগাযোগ করেন। তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য উপজেলার নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে বিএনপি। একই বিষয়ে সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে এদিন রাতে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সূত্রমতে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির পদধারী নেতারা কেউ যেন অংশ না নেন, সেজন্য প্রতিনিয়ত দলের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারা বিষয়টি তদারকি করছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অসংখ্য যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তকে তৃণমূলের বিএনপি নেতারা সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারাও মনে করছেন জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর সরকারের অধীনে অন্য কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। অতীতেও যারা বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচন করেছেন, তারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। এবার সেই অভিজ্ঞতার আলোকে কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে চান না। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বহিষ্কৃত ও সাবেক নেতারা অংশ নিতে পারে। সেক্ষেত্রেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এদিকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোয় দলীয় কোন্দল, নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, বিভাজন ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জেরে দলটিতে বেড়েছে বিশৃঙ্খলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নামে চালানো হচ্ছে নানা অপপ্রচার। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। সূত্র বলছে, এসব ঘটনায় বিব্রত কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব অপপ্রচারকারীকে শনাক্তকরণের জন্যও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে হাইকমান্ড। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাদের সাফ বলে দেওয়া হয়েছে, দল যেখানে নির্বাচনে যাবে না, সেখানে তারা যেন নির্বাচন থেকে সরে আসেন, দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলেন। অন্যথায় বিএনপি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। তবে অনেকেই বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করি, প্রথম ধাপের নির্বাচনে যারা ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা তা প্রত্যাহার করে নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়ে বিএনপি খুবই কঠোর। এজন্য তৃণমূলের অন্য নেতাদের সঙ্গেও যোগযোগ রাখছি। যাতে প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ধাপেও দলের কেউ যেন মনোনয়ন দাখিল না করেন।’ প্রসঙ্গত, চার ধাপে ৪৫০-এর বেশি উপজেলায় নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপে ৮ মে ১৫০টি উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ হবে। এসব উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন ছিল ১৫ এপ্রিল। ২২ এপ্রিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা আশা করছেন, এর মধ্যেই পদধারী নেতারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন। কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, তার সাংগঠনিক বিভাগ সরাইল, মেঘনা ও মতলব উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমাদানকারী তিন নেতা ইতোমধ্যে তা প্রত্যাহার করবেন বলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।