গাঁদা ফুল


গাঁদা ফুল

‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল

এনে দে এনে দে…

নৈলে বাঁধবো না, বাঁধব না চুল’

এই ছড়াগানের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। গানের শুরুতে যে ফুলটির কথা আছে, সেই ফুলকে অঞ্চলভেদে গন্ধা, গেন্ধা বা গেঁদা নামেও ডাকা হয়। শীতকালীন ফুলগুলোর মধ্যে রূপে, গুণে এই ফুল অন্যতম। একে শীতের ফুল বলা হয়ে থাকলেও বর্তমানে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ প্রায় সব ঋতুতেই দেখা যায়।

ইংরেজিতে ম্যারিগোল্ড (Marigold) নামে পরিচিত গাঁদা অ্যাস্টারেসিই পরিবারের ট্যাজিটিজ গণের ফুল। এর জাত ও রঙেও রয়েছে রকমভেদ। এই ফুল সাধারণত উজ্জ্বল হলুদ ও গাঢ় খয়েরি হয়ে থাকে। এ ছাড়া লাল, কমলা, লাল-হলুদের মিশ্রণের গাঁদাও দেখা যায়।

গাঁদা ফুলের গাছ রোপণের উপযুক্ত সময় মার্চ মাস। অধিক পরিমাণে চাষের জন্য চার-পাঁচবার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করে নিতে হয়। সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ ও উর্বর মাটির উঁচু জমি গাঁদা ফুলের চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে যত্ন করলে সব ধরনের মাটিতেই গাঁদার চাষ করা যায়।

১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় গাঁদা। যশোরের গদখালী, ঝিকরগাছা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী ও পটিয়া, ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় অধিক হারে চাষ হয় এই ফুল গাছের।

চায়নিজ, তারা, ছোট, কমলা সুন্দরী, রাজগাঁদা, আফ্রিকান ও ফরাসি জাতের গাঁদা ফুলগুলো আমাদের দেশে বেশি চাষ হয়। আফ্রিকান জাতের গাছ ৩০-১০০ সেমি লম্বা হয়। ফুল কমলা, হলুদ ও গাঢ় খয়েরি রঙের ছিটা দাগযুক্ত থাকে।

ফরাসি গাঁদার গাছ খাট ও ঝোপালো, ১৫-৩০ সেমি লম্বা হয়। ফুল আকারে ছোট ও রং লাল। কমলা সুন্দরীর গাছ খুব শক্ত। ফুল গাঢ় কমলা। শাখা-প্রশাখা বেশি হওয়ায় ফুলের পরিমাণ বেশি হয়। ফুলের আকার ৪.৫ থেকে ৫ সেমি। অনেক দিন পর্যন্ত ফুল ফোটে। প্রতি গাছে ৫৫-৬০টি ফুল পাওয়া যায়। রোগ সহনশীল।
বাগানের শোভা বর্ধন ছাড়াও বিয়ে, জন্মদিন, পূজা-অর্চনা, গৃহসজ্জা, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবসসহ প্রায় সব অনুষ্ঠানেই দরকার হয় গাঁদা ফুলের। এর পাতার রসও খুব উপকারী। কারো ত্বক কেটে গেলে, রক্ত পড়া বন্ধ করতে, কাটা ঘা শুকাতে জীবাণুনাশক হিসেবে এই গাছের পাতার রস খুবই কার্যকরী। এর অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের কারণে ঔষধি গাছ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। নমাটোড, সাদামাছি ও অন্যান্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ তাড়াতে এবং বাগানের গাছপালা রক্ষা করার জন্য এর ব্যবহার হয়।