রেস্ট হাউসে পাওয়া তরুণীর লাশ সম্পর্কে যা জানাল পুলিশ


ময়মনসিংহ নগরীর নিরালা রেস্ট হাউসে হত্যার শিকার তরুণীর পরিচয় এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তবে কক্ষ ভাড়া নেওয়ার সময় তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামির বরাত দিয়ে পুলিশ এখন বলছে, হত্যার শিকার তরুণী ‘যৌনকর্মী’ ছিলেন। টাকা কম দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে তরুণীকে হত্যা করেন ওই যুবক। এর আগে ১৮ মার্চ দুপুরে নগরীর ছোট বাজার এলাকার রেস্ট হাউসটির ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে আনুমানিক ওই তরুণীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রিফাত আল আফসানী পরদিন থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট নিহতের আঙুলের ছাপ মিলিয়েও পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। মুখে মাস্ক এবং হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখায় রেস্ট হাউসের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত যুবককেও প্রথমে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পরে রেস্ট হাউসে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে ১৯ মার্চ রাতে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে আটক করা হয় রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে (২৩)। তিনি গজারিয়ার চরচাষি গ্রামের খোকনের ছেলে। নড়াইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া রাকিব পরে হত্যার কথা স্বীকার করেন বলে জানিয়েছে। সোমবার ময়মনসিংহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রাকিবের বরাতে জানানো হয়, গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে ওই তরুণীকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ময়মনসিংহে নিয়ে যান রাকিব। রাত ২টার দিকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে চার দিনের জন্য নিরালা রেস্ট হাউসের একটি কক্ষ ভাড়া নেন তাঁরা। পরদিন তরুণীকে কম টাকা দিয়ে বিদায় করতে গেলে রাকিবের সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তরুণী রাকিবকে চড় দেন। পরে রাকিব টাকা আনার কথা বলে বের হয়ে এসে শহরের স্বদেশী বাজার থেকে চাকু কিনে রেস্ট হাউসে যান। সেখানে তরুণীকে বাথরুমে নিয়ে হত্যা করে কক্ষে তালা দিয়ে পালিয়ে যান। পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। ওই তরুণী ‘ভাসমান যৌনকর্মী’ এবং তার পরিচয় এখনও শনাক্ত হওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণীর মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে। তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন রাকিব। এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু না পাওয়ায় তরুণীর পরিচয় শনাক্ত করতে দেরি হচ্ছে। এদিকে পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কক্ষ ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে রেস্ট হাউসের ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান বলেন, দু’জনই স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। জাতীয় পরিচয়পত্র মোবাইল ফোনে দেখান। ফটোকপি না থাকায় রুম দিতে না চাইলেও অনেক রাতে কোথায় যাবেন– এমন মানবিক দিক বিবেচনায় রুম ভাড়া দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, বোরকা পরা মেয়েটিকে দেখে কোনোভাবেই যৌনকর্মী মনে হয়নি। পরদিন সকালে পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা থাকলেও কক্ষ তালাবদ্ধ পাওয়ায় অপেক্ষায় ছিলাম। ঘটনার তিন দিন পর মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে ম্যানেজার বলেন, রেস্ট হাউসে শতাধিক কক্ষ রয়েছে। ওই কক্ষ পরদিন থেকে তালাবদ্ধ পেলেও চার দিনের জন্য ভাড়া নেওয়া থাকায় বিষয়টি গুরুত্ব দেননি।