সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে কলমে


চট্টগ্রামে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে অস্থির ভোগ্যপণ্যের বাজার। কোনো পণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও এ দামে বিক্রি হচ্ছে না। ২৯ পণ্যের বেশিরভাগই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে। সরকার নির্ধারিত আলু দাম ২৮ দশমিক ৫৫ টাকা। কিন্তু বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডিম, আলু ও মুরগির দাম। এছাড়া চিনি ভোজ্যতেলের দামও আকাশচুম্বী। ঈদের পরে একদফা এসব পণ্যের দাম কোনো কারণ ছাড়া বাড়ানো হলেও এখন দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এ অবস্থায় অনেকেই পণ্য না কিনে ফিরে যাচ্ছেন। সরকার কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম ঠিক করে দিলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন খরচ বাড়ায় কৃষক পর্যায়েই দাম বেশি। তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরবরাহ সংকটে নতুন করে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে কষ্টে আছেন স্বল্প আয়ের লোকজন। ভোক্তাদের অভিযোগ-প্রশাসনের তদারকির অভাবে ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করছেন না। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করলে ব্যবসায়ীরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। সরকার দাম বাড়ালে মিনিটের মধ্যে কার্যকর। আর দাম কমালে দিনের পর দিনও কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করারও যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসহায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। ১৫ মার্চ মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। শুক্রবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ পণ্যই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী গরুর মাংস ৬৬৪ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকায় নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। নির্ধারিত দর অনুযায়ী প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হওয়ার কথা ২৬২ টাকায়, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়। চাষের পাঙাশ কেজি ১৮০ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। সবচেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। আলু বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে। সরকার নির্ধারিত আলু দাম ২৮ দশমিক ৫৫ টাকা। কিন্তু বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা দামে। প্রতি কেজি ভালোমানের ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকার বেশি দামে। আবার কিছু কিছু অভিজাত বাজারে আরও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু নিুমানের পেঁয়াজ সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দামে। তবে মানভেদে ৫ টাকা কম বেশি রয়েছে। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল সরকার ভোজ্যতেলের দামও বাড়িয়ে নির্ধারণ করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম চার টাকা বাড়ছে। প্রায় একই হারে বাড়ছে বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দামও। তবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে দুই টাকা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া সুপার পাম তেলের নতুন দামও নির্ধারণ করা হয়েছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৬৭ টাকা ও ৫ লিটারের বোতল ৮১৮ টাকা। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৪৯ টাকা। আগে নির্ধারিত না থাকলেও খোলা পাম সুপার তেলের লিটার প্রতি দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১৩৫ টাকা। উপজেলার কিছু কিছু দোকানে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। খাতুনগঞ্জের আড়তদার কামরুল হাসান জানান, প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। ফলে তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারেও দাম কমে আসবে। বাজারদর : চট্টগ্রামে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। নগরীর বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, শসা ৪০ টাকা, বাঁধাকপি, গাজর, লাউ ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ, শিম ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এর বাইরে পেঁপে, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়স এবং পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বরবটি আর শিমের বিচি। এছাড়াও কাকরোল কেজি ১০০ টাকা এবং করলা ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। রুই ৬০০ টাকা, কাতল ৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০-১০০০ টাকা, কাঁচকি ৫০০ টাকা, কই ৪০০ টাকা, পাবদা ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০-৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।