জীর্ণ রেল সেতু: নতুন করে নির্মাণ করতে হবে


আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করে বহু দেশ তাদের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা যায়। জীর্ণ রেল সেতু দিয়ে বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। কোথাও সেতুর দুই পাশের মাটি সরে গেছে। আবার কিছু সেতুর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নড়বড়ে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো কোনো সেতু এলাকায় অতি ধীরগতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় ৯০ শতাংশ রেল সেতুই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। ঝুঁকি এড়াতে এসব সেতুর স্থলে নতুন সেতু নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশে ৪ হাজারেরও বেশি রেল সেতু রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই প্রায় শত বছরের পুরোনো। এসব সেতুর বেশির ভাগই শুধু ইট-বালি-চুন দিয়ে তৈরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সেতু ২০-২৫ বছর হলেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বলেছেন, জীর্ণ এসব সেতুর পিলার টিকিয়ে রাখতে রড-সিমেন্টের সমন্বয়ে জ্যাকেট সিস্টেম আস্তর দেওয়া হচ্ছে। বস্তুত এসব সেতু মেরামত করে সচল রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। কোনো কোনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ধসে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এসব সেতু নতুন করে নির্মাণের পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের রেললাইনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ। জরাজীর্ণ রেলপথের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পাথরস্বল্পতাও। ফলে প্রায়ই ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের কারণে কমে গেছে রেলের গতি। অভিযোগ রয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ মেরামতসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ অবস্থায় রেললাইনগুলোর মেরামত ও সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। দেশে অবৈধ ও অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বস্তুত দেশে ট্রেন দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ অবৈধ ও অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং। এ সমস্যার সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে। রেলে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে। গত দেড় দশকে রেলে বিপুল অঙ্কের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে; চলমান রয়েছে আরও বিপুল অঙ্কের প্রকল্প। প্রশ্ন হলো, রেলের জরাজীর্ণ লাইন ও সেতু উন্নয়নে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন? দেশের প্রচলিত যোগাযোগব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হলো রেল খাত। দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সম্ভাবনা বিনষ্ট করা হয়েছে। রেল নিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। সব ধরনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করে রেলের প্রকৃত উন্নয়নে দৃষ্টি দিতে হবে।