অমর একুশে বইমেলা: চিরচেনা সেই রূপে ফেরা


বইমেলা এখন ফিরেছে সেই চিরচেনা রূপে। পাঠকরা আর ঘরে বসে নেই। বইয়ের টানে নানা বয়সি পাঠকের পদচারণায় মুখর মেলাপ্রাঙ্গণ। হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে বই। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা দৃশ্য। শনিবার বইমেলায় মেট্রোরেলে এত পাঠক এসেছিলেন যা ভাবনার অতীত। মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে রীতিমতো হিমশিম খাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমআরটি পাস যাত্রীদের কাছ থেকে যান্ত্রিকভাবে বুঝে নেওয়ার পদ্ধতি থাকলেও শেষপর্যায়ে মেট্রোরেলের কর্মকর্তারা হাতে সংগ্রহের ব্যবস্থা নেন। রাজধানীর গোপীবাগ থেকে আসা ফারহানা বলেন, মেলায় এখন বিচিত্র বইয়ের সম্ভার দেখা যাচ্ছে। যেটি আগে অনেক কম ছিল। এক্ষেত্রে তরুণ লেখকরা বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন বলা যায়। খুলনা থেকে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতি বছর বইমেলার না এলে মনে হয় কী যেন বাদ রয়ে গেল। এদিন সকালে মূলমঞ্চে শিশুকিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চ‚ড়ান্তপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ক শাখায় প্রথম হয়েছে নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির, দ্বিতীয় হয়েছে রোদসী আদৃতা ও তৃতীয় হয়েছে নৈঋতা ভৌমিক। খ শাখায় প্রথম হয়েছে তানজিম বিন তাজ প্রত্যয়, দ্বিতীয় হয়েছে সুরাইয়া আক্তার ও তৃতীয় হয়েছে রোদসী নূর সিদ্দিকী। গ শাখায় প্রথম হয়েছে কেএম মুনিফ ফারহান দীপ্ত, দ্বিতীয় হয়েছে নবজিৎ সাহা ও তৃতীয় হয়েছে সরকার একান্ত ঐতিহ্য। বিচারক ছিলেন সংগীত-ব্যক্তিত্ব শেখ সাদী খান, ইয়াকুব আলী খান ও চন্দনা মজুমদার। বইমেলার মূলমঞ্চে বিকালে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: শহিদ সাবের এবং পান্না কায়সার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মনির ইউসুফ ও মামুন সিদ্দিকী। আলোচনা করেন গিয়াস উদ্দিন, রতন সিদ্দিকী ও শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শান্তা মারিয়া, কথাসাহিত্যিক এশরার লতিফ, শিশুসাহিত্যিক আহসান মালেক ও প্রাবন্ধিক সুমন শামস্। সংগীত পরিবেশন করেন জীবন চৌধুরী, মীম বাউল, ঝর্ণা বিশ্বাস, ফারুক হোসেন, নাফিসা ইসলাম ফাইজা, অমিয় বাউল ও তামান্না নিগার তুলি। বই সংলাপ ও রিকশাচিত্র মঞ্চের উদ্বোধন: অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ আয়োজনের অংশ হিসাবে শনিবার প্রথমবারের মতো সংযোজিত ‘বই সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চ’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান বিকাল ৫টায় মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে লেকসংলগ্ন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। মঞ্চের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান, আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি, বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর ও বাংলা একাডেমির পরিচালকরা। এ মঞ্চে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রিকশাচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি মেলায় প্রকাশিত নির্বাচিত বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রকাশকরা বইমেলার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন। এছাড়া বাংলা একাডেমি প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ বই বিষয়ে আলোচনা হবে। নতুন বই: বাবুই প্রকাশনী থেকে এসেছে প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরীর লেখা ছোটদের গল্পের বই ‘মিষ্টির গল্প’। ঐতিহ্য থেকে এসেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও আবুল হাসনাত সম্পাদিত ‘নব্বই-এর অভ্যুত্থান’, আজব প্রকাশ থেকে এসেছে কবি ও সংগীত গবেষক হক ফারুকের তৃতীয় কবিতার বই ‘সবুজ সন্ন্যাস কাল’। এছাড়া এসেছে ১৯৭২ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত নয়টি প্রচ্ছদ কাহিনী ভিত্তি করে চিন্ময় মুৎসুদ্দীর বই ‘বিচিত্রায় বঙ্গবন্ধু’। বইটি প্রকাশ করেছে অনন্যা।