বইমেলার শেষ দিনে ভিড় বিক্রি দুই-ই কম


বর্ধিত দুদিন পেরিয়ে অবশেষে এবারের অমর একুশে বইমেলা শেষ হলো। শনিবার মেলার অন্যবারের শেষ দিনের তুলনায় ভিড় এবং বই বিক্রি দুটোই কম ছিল। তবে যারাই এসেছেন তারা কম বেশি বই কিনেছেন। এ বছর মেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। শেষ দিনের প্রতিবেদনে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এবারের বইমেলায় (১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত) প্রায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। আর বাংলা একাডেমি বিক্রি করেছে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার বই। গত বছর বই বিক্রি হয়েছিল ৪৭ কোটি টাকার বেশি। বইমেলার নতুন বইয়ের স্টলে শেষ দিনে নতুন বই জমা পড়েছে ১৪৯টি। এ বছর বই প্রকাশিত হয়েছে তিন হাজার ৭৫১টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৭৩০টি। মেলায় গল্পের বই এসেছে ৫২১টি, উপন্যাস ৫৪০টি, কবিতা ১২৬২টি, মুক্তিযুদ্ধ ৬৯টি, বিজ্ঞান ৪৪টি, ভ্রমণ ৬৪টি, ইতিহাস ৫৫টি, ধর্মীয় ৬২টি, অনুবাদ ৬১টি। মেলার শেষ দিন শনিবার ছুটি থাকায় মেলার দ্বার খোলে বেলা ১১টায়। দ্বার খোলার পর থেকেই আলো নিভে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। শেষ মুহূর্তের ভালোলাগা আর আনন্দের নির্যাস নিতে ভোলেননি কেউই। বইপ্রেমীরা কিনে নিয়েছেন বাকির খাতায় জমে থাকা শেষ বইগুলো। আর দর্শনার্থীরা অন্যান্য দিনের মতোই শেষ দিনেও আড্ডা আর ঘোরাঘুরি করে কাটিয়েছেন সময়। সব মিলিয়েই লেখক-পাঠক-প্রকাশক আর দর্শনার্থীর সরব উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি বলেন, সার্বিক দিক হিসাব করলে এবারের মেলা খুব ভালো হয়েছে। এর পরিবেশ আর নান্দনিক আয়োজন মুগ্ধ করেছে সবাইকে। মেলার বেচাকেনাও ছিল বেশ ভালো। তবে পাইরেট ও ন্যাকেড বইয়ের পরিমাণ বেড়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মেলা ঐতিহ্য হারাবে। সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমদ বলেন, এবার মেলা শুরু থেকেই খুব ভালো হয়েছে। শোনা যাচ্ছে আগামীবার মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে না। তবে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহিদ মিনারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে মেলা জড়িত। এখানে থাকা উচিত। বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারের নাম আগেই ঘোষণা করেছিল বাংলা একাডেমি। বইমেলার মূল মঞ্চে এই পুরস্কারগুলো সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ-পেয়েছে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ : শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস : বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ গ্রন্থের জন্য জানিম্যান বুকসকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি- পেয়েছে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’। এ বছর অমর একুশে বইমেলা নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেঙ্গল বুকস (এক ইউনিট); নিমফিয়া পাবলিকেশন (দুই-চার); অন্যপ্রকাশ পেয়েছে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’।