পাঠকের হাতে হাতে বই


মেলার শেষ শুক্রবার গতকাল পাঠকের হাতে হাতে ছিল বই। হাসি ছিল প্রকাশকদের ঠোঁটে। ছোট-বড় সব প্রকাশনাতেই ছিল ব্যস্ততা। বিক্রয়কর্মীদের অনেকেই বসার সময়ও পাননি। তারা ভীষণ আশাবাদী-বিক্রির এ ধারা বইমেলার শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এদিন মেলার দ্বার খুলে যায় বেলা ১১টায়। সকালে ছিল শিশুপ্রহর। দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুচত্বরে আনন্দে কাটিয়েছে শিশুরা। দুপুরের সময়টা বাদ দিয়ে পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা মেলায় ছিল মানুষের ঢল। বিকালে আজব প্রকাশের স্টলে আসেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেইটের গায়ক শাকিব চৌধুরী এবং দেশের আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল ব্যান্ডের গিটারিস্ট কাজী ফায়সাল আহমেদ। ‘গুরু আজম খান’ এবং ‘বাংলার রক মেটাল’ বই নিয়ে পাঠকদের সঙ্গে মেতে ওঠেন তারা। বৃহস্পতিবার রাত আর শুক্রবার সকালের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে মেলা মাঠের অধিকাংশ জায়গাই ছিল কর্দমাক্ত। কোথাও কোথাও জমেছিল পানি। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে দর্শনার্থীদের। বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন অনেকেই। একাধিক পাঠক ও প্রকাশক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে এবার বইমেলার আয়োজন সবচেয়ে খারাপ। বৃষ্টি হলে পানি জমবে এটা স্বাভাবিক। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে উঁচুনিচু জায়গা বালু দিয়ে ভরাট কিংবা চলার পথগুলোতে ইট বিছানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাংলা একাডেমি তা করেনি। এখনো অনেক স্টল খালি পড়ে আছে। এগুলো যাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তাদের কি জবাবদিহিতায় আনা হয়েছে? কর্দমাক্ত মাঠ প্রসঙ্গে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কেএম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পানি অপসারণের চেষ্টা করেছি। তবে এত বড় মাঠে ইট-বালু ফেলা বাংলা একাডেমির পক্ষে সম্ভব নয়। মেলা পরিদর্শনে চীনের রাষ্ট্রদূত : চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অমর একুশে বইমেলা পরিদর্শন করেছেন। শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেন। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এ সময় কয়েকটি বইও কেনেন এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চায়না বুক হাউজ থেকে শিশুদের কিছু বই উপহার দেন। রাষ্ট্রদূতের আগমন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চায়না বুক হাউজের সামনে লায়ন ড্যান্স, অপেরা মাস্ক, পেপার কাট, চায়নিজ ক্যালিগ্রাফি ও চায়নিজ চাশিল্প পরিবেশনের আয়োজন করা হয়। নতুন বই : এদিন নতুন বই এসেছে ১৯৭টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে এম. আবদুল আলীমের গবেষণা ‘পাবনা জেলায় বঙ্গবন্ধু’। কথাপ্রকাশ এনেছে হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস ‘উপেক্ষিতা সীতা’ ও ইমতিয়ার শামীমের গল্পগ্রন্থ ‘গোপন রাজনীতির গল্প’। জিনিয়াস পাবলিকেশন্স এনেছে আসাদ মান্নানের কাব্যগ্রন্থ ‘হাতে হরফের হাতিয়ার’। গ্রন্থকুটির এনেছে ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ‘রাজশাহী জেলার প্রত্নপীঠ ও স্থাপত্যিক ঐতিহ্য’। অস্তিত্ব এনেছে ধ্রুব এষের উপন্যাস ‘শঙ্খনীল দাশ স্মরণসংখ্যা’ ও ‘হিজল দাশ কবি’ এবং হায়দার আকবর খান রনোর লেখা জীবনীগ্রন্থ ‘শহীদ আসাদ’। অন্বেষা এনেছে নুসরাত জাহানের ‘বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি : হস্তশিল্পের বিস্তার’। অন্যান্য আয়োজন : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মামুন হুসাইন। আলোচনা করেন ওয়াসি আহমেদ ও জাফর আহমদ রাশেদ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। তিনি বলেন, নিরন্তর নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্য অনন্য উচ্চতা লাভ করেছে। নবীন পাঠকদের তার সাহিত্যপাঠে উৎসাহিত করতে হবে। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক, পর্যটক ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, কথাসাহিত্যিক নভেরা হোসেন, কবি কুশল ভৌমিক ও শিশুসাহিত্যিক আহমেদ জসিম। এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় শিশুকিশোর চিত্রাংকন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।