শিক্ষকদের পাশে চান বুয়েট শিক্ষার্থীরা


হাইকোর্টের আদেশের ফলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতিতে আর বাধা নেই। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চান রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে টানা তিন দিন ধরে আন্দোলন করছে তারা। সোমবারও তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। এবার ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত করতে শিক্ষকদের পাশে চেয়েছেন তারা। আদালতের আদেশের পর সোমবার বিকালে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষকদের প্রতি এ আহ্বান জানান তারা। বিকাল সাড়ে ৫টায় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্তে¡ও ২৮ মার্চ মধ্যরাতে বহিরাগত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদ হত্যার পর ৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক প্রতিষ্ঠানেই তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের ওপর। এরই ফলস্বরূপ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সকল প্রকার সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে। শিক্ষার্থীরা বলেন, বুয়েট প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে ভুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র‌্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদের তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসাবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯-এর সাবেকুন্নাহার সনি, যন্ত্রকৌশল ০৯-এর আরিফ রায়হান দ্বীপ এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭-এর আবরার ফাহাদকে হারিয়েছি। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। তারা বলেন, মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি। দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে আমাদের বুয়েটের এলামনাইরাও ইতোমধ্যে আমাদের ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার পক্ষে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা আমাদের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন। শিক্ষকদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা ও আস্থা রাখি। তাদের কাছ থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি, তারাই আমাদের প্রতিটি ক্লাসরুম প্রতিটি ল্যাবের নায়ক। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, লেকচারার যারাই আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, আমরা গত চার বছরে শিক্ষার্থীরা এমনটা কখনো অনুভব করিনি যে তারাও চান, পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করে সেই অন্ধকার দিনগুলো ফিরে আসুক। তারা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি এবং কখনো চাইবেনও না। তারা সবসময়ই আমাদের সব শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিলেন। আজ এই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আমরা বুয়েটের সব শিক্ষকের কাছে আর্জি জানাচ্ছি তারা যাতে এমন সংকটের মুহূর্তে আমাদের পাশে দাঁড়ান। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, আমরা উপাচার্যের ওপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। আমরা তার কাছে এই আর্জি জানাচ্ছি, আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাক্সক্ষা তা সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে তিনি পূরণ করেন। বুয়েটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল ছাত্রলীগ সমমনাদের: আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বুয়েটের শহিদ মিনারসংলগ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সমমনা একদল শিক্ষার্থী। সোমবার বিকাল পৌনে ৫টায় শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সেখানে তারা কিছুক্ষণ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। ছাত্রলীগের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও বুয়েটের সদ্যসাবেক ছাত্র হাসিন আজফারসহ ১১ জন শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। অন্য ১০ শিক্ষার্থীও ছাত্রলীগ-সমর্থক বলে জানা গেছে। এই কর্মসূচির সময় শহিদ মিনারের সামনেই অবস্থান করছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ কনক। পরে বুয়েটের ২০তম ব্যাচের ছাত্র আশিক আলম বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেয়েছি। জয় বাংলা স্লোগান ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে আমরা এই রায়কে সাধুবাদ জানালাম। প্রগতিশীল সব সংগঠনকে আমরা বুয়েটে স্বাগত জানাই। অন্ধকার কোনো সংগঠন এবং স্বাধীনতাবিরোধী কোনো চেতনা বুয়েটে ঠাঁই পাবে না। এদিকে আজ বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির আবাসিক হলে সিট ফিরিয়ে দেওয়া, বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু করা, স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে বাধাদানকারী বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিচারের আওতায় আনা এবং বুয়েটসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী তৎপরতার মূলোৎপাটনের দাবিতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মেডিকেল কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মাদ্রাসায় মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।