শিশুর অটিজম সচেতনতার বিকল্প নেই


সোমবার পালিত হয়ে গেল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। শিশুর জন্মগত স্নায়বিক দুর্বলতা অর্থাৎ অটিজমের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে প্রত্যেকের সজাগ ও সময়োপযোগী হওয়ার জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। বিএসএমএমইউ ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমের (ইপনা) উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে, দেশে প্রতি ৫৮৯ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। শহরে প্রতি ১০ হাজারে ২৫ জন এবং গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে ১৪টি শিশু অটিস্টিকে আক্রান্ত হচ্ছে। বলা বাহুল্য, অটিজমে যেসব আচার-আচরণ, উপসর্গ ও প্রভাব দেখা যায় সে সম্পর্কে আমরা কমই জানি। অটিজম একধরনের জটিল নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বা স্নায়ুবৈকল্য-এটি জানা থাকলেও এর ধরন-ধারণ সম্পর্কে আমাদের তেমন জানা নেই। অনেক অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবা শুধু এটুকু জানেন যে তাদের সন্তান অন্য দশটা শিশুর মতো নয়; তাদের আচরণ সবার থেকে আলাদা ও অস্বাভাবিক। অন্যদিকে স্কুলের শ্রেণিতে, খেলার মাঠেও এরা স্বাভাবিক নয়। ফলে এসব শিশুকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ও অসচেতনতার অভাব নেই। অটিজমের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ, অধিক চঞ্চল, জেদি ও আক্রমণাত্মক আচরণ, অহেতুক ভয়ভীতি, খিঁচুনি ইত্যাদি। এছাড়াও অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে অধিক মাত্রায় অস্থিরতা, অমনোযোগিতা, একই আচরণ বারবার করা, অন্যকে আঘাত করা, নিজেই নিজেকে আঘাত করা, চিৎকার ও মারামারি করা ইত্যাদি দেখা যায়। পরিবারে যখন অটিস্টিক শিশু থাকে, সেই পরিবারকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জীবনযাপন করতে হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, শিশুটি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবাকেও পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ, সহ্য করতে হয় নানা বৈষম্য। অটিজম সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ ও চেষ্টা থাকলেও উপযুক্ত তথ্য, বইপুস্তক, গবেষণা ও প্রচার-প্রচারণা তেমন নেই বলে সেটিও সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। মনে রাখতে হবে, অটিস্টিক শিশু সমাজের বোঝা নয়। ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে তারাও সমাজে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমরা মনে করি, পাঠ্যপুস্তকসহ মিডিয়ায় গণসচেতনতা সৃষ্টি করে অটিজম শিশুকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা দরকার। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছাড়াও নিতে হবে নানা পদক্ষেপ। উল্লেখ্য, সরকার অটিজম বিষয়ে নানা উন্নয়নমূলক কাজ করছে। এ ধারা চলমান থাকবে-এটাই প্রত্যাশা।