সাদির মৃত্যুর আগে কী ঘটেছিল, বর্ণনা দিলেন ছোট ভাই শিবলী মহম্মদ


রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক সাদি মহম্মদের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার ছোট ভাই প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ। বুধবার সন্ধ্যায় নিজ ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সংগীতশিল্পীর মরদেহ। শিবলী নিজেই প্রথমে ঘরের দরজা ভেঙে ভাইয়ের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। যে মুহূর্ত কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না তিনি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের শিবলী মহম্মদ বলেন, আমার ভাই মনে কষ্ট নিয়ে চলে গেছে। সে মনে করত, তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। কত মানুষ কত পদক পাচ্ছে, এসব তাকে খুব ভাবাতো। সে বড্ড অভিমানী ছিল। আমরা তাকে বুঝাতাম, আমাদেরকে মানুষ ভালোবাসে। পদক দিয়ে কী হবে? কিন্তু তার মনে চাপা কষ্ট ছিল। সেই কষ্ট নিয়েই চলে গেল। বুধবার সন্ধ্যার পরের ঘটনা বর্ণনা করে এই নৃত্যশিল্পী বলেন, ইফতার করে ভাই নিজের রুমে গিয়ে গানের রিহার্সেল করছিল। এর পর তার সহকারীকে বলেছে, তুমি বাইরে যাও আমি রিহার্সেল শেষ করে ফোন করলে এসো। তখন আমি তার রুমের সামনে গিয়ে দেখতে পাই ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। যেটা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। কারণ, তিনি কখনোই রুমের দরজা বন্ধ করেন না রিহার্সেলের সময়। এর পর কড়া নাড়লেও ভেতর থেকে কোনো শব্দ মেলে না। পরে আমি বলি দরজা ভাঙো। দরজা ভেঙে ভেতরে যে দৃশ্য আমি দেখলাম....।’ শিবলী মহম্মদ বলেন, আমার ভাই রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি পেলে একটু তৃপ্তি পেত। সাদি মহম্মদ তো আমার বড়, তার সামনে যখন আমি একুশে পদক পাই সেটা ছিল আমার জন্য বিব্রতকর। আমি ভাইকে বলি, একুশে পদক নিব না। কিন্তু সে আমাকে বলে, কেন নিবি না? তুই তো নাচের জন্য বাংলাদেশে কম কিছু করিস নি। পরে তাকে যখন একুশে পদক অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য কার্ড দিলাম, সে বললো- না থাক রে। তুই যা। আমি সেখানে যাব না। গেলে অনেকেই প্রশ্ন করবে, আমি কেনো পদক পাই না। এগুলো আমাদেরকে বিব্রত করবে। সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।