চট্টগ্রামে পেঁয়াজ কেজিতে এক লাফে বাড়ল ২৫ টাকা


দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এক রাতের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৮ থেকে ২২ টাকা। আর খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২৫ টাকার বেশি। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। বাজারে পেঁয়াজ থাকলেও অনেকে বিক্রি বন্ধ রেখেছেন দাম আরও বাড়ার আশায়। রোববার সকালে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা। যদিও শনিবার রাতে এই পেঁয়াজের দাম ছিল পাইকারি ৪০ থেকে ৪২ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি-পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত সরকার। ভারতের অভ্যন্তরে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। ভারতের শুল্ক আরোপের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এক লাফে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে কিছুদিন ধরে এমনিতে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। এর মধ্যে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় ‘আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা’ হয়েছে। পণ্যটি দীর্ঘদিন সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছিল। শুল্কযুক্ত দামের পেঁয়াজ এখনো আমদানি না হলেও দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি অন্তত ২৫ টাকা বেড়ে গেছে। বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাবে হঠাৎ এমন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় পণ্যটির দাম বাড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এতদিন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক দিতে হতো না বাংলাদেশকে। তবে হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় দেশটি। শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের উপসচিব অমরিতা টিটুসের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই কথা জানানো হয়। দেশটির বাজারে পেঁয়াজের দামের নাগাল টানতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোববার থেকে এটি কার্যকর হয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানা গেছে। রোববার সকালে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা। যদিও শনিবার রাতে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। আর একটু নিুমানের পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা। এসব পেঁয়াজ শনিবার রাতে বিক্রি হয়েছিল ৪২ থেকে ৪৩ টাকায়। ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা। যদিও শনিবার রাতে এই পেঁয়াজের দাম ছিল খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। আর একটু নিুমানের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা। এসব পেঁয়াজ শনিবার রাতে বিক্রি হয়েছিল ৪৮ টাকার কাছাকাছি দামে। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা দরে। জানা যায়, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়ে কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আমদানি করা হয় বাকি ৪ লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে। খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, আড়তগুলোয় ভারতীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। বিভিন্ন আড়তে শত শত বস্তা পেঁয়াজ মজুতও রয়েছে। ট্রাকে ট্রাকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পেঁয়াজ যাচ্ছে। তবে খুচরা পর্যায়ে দোকানগুলোয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম দেখা গেছে। এছাড়া মসলাজাতীয় পণ্যের দামও বাড়তির দিকে। খাতুনগঞ্জের আড়তদার আবদুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুনে ৬ দশমিক ৩৮ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে ভারত। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ২৬ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়াবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, এক রাতের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজের ওপর শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সামনে আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। হিলির খুচরা বাজারে বেড়েছে দাম : এদিকে আমাদের হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারত সরকারের শুল্ক আরোপের খবরে দিনাজপুরের হিলির খুচরা বাজারে বেড়েছে পণ্যটির দাম। কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ কমের কারণে দাম বেড়েছে বলে বলছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে নিু-আয়ের মানুষ।