বিদ্যালয় ও লোকালয় ঘেঁষে ইটভাটা, অবাধে পুড়ছে কাঠ !


আইন লঙ্ঘন করে হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় গড়ে উঠেছে ১৬ অবৈধ ইটভাটা। এর মধ্যে এক গ্রামেই রয়েছে পাঁচটি। লোকালয় ও বিদ্যালয় ঘেঁষে গড়ে ওঠা এসব ভাটায় আগুন জ্বলে, ইট পোড়ে। মাটি, খড়ি, ইটবোঝাই করে ট্রাকের পর ট্রাক আসে। ধুলো-ধোঁয়ায় একাকার হয়ে থাকে চারপাশ। এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের আসা-যাওয়া, পড়াশোনা আর খেলাধুলা।হরিণাকুণ্ডুতে ১৩ ইটভাটা চলে জিগজ্যাগে, বাকি তিনটি হাওয়ায়। তবে একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের লাইসেন্স নেই। এসব ভাটায় প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার ৪ মণ কাঠ পোড়ানো হয়।ঝিনাইদহ-হরিণাকুণ্ডু প্রধান সড়কের সামনে পারমথুরাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির ২০ মিটারের মধ্যে আট বছর আগে গড়ে তোলা হয় মেসার্স আসাদ জাহাঙ্গীর ব্রিকস। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে ভাটাটি গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ইশারায় কয়েক মাস পর ফের চালু হয় এটি।এ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী হাজেরা খাতুন জানায়, ভাটার ধোঁয়ার একাকার হয়ে থাকে চারপাশ। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। চোখ মেলতে কষ্ট হয়। মুখে ওড়না পেঁচিয়ে চলাচল করে তারা।প্রধান শিক্ষক লাবণী খাতুন বলেন, স্কুলের সীমানার ৬৫ ফুটের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে ভাটাটি। গোটা মৌসুমে কাঠ পুড়িয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কালো ধোঁয়া আর উড়ে আসা ছাই চোখেমুখে লাগে। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে তারা খুব কষ্টে আছেন।ভাটা মালিক জাহাঙ্গীর হোসেনের দাবি, অভিযোগের পর তারা ভাটা অনেকটা সরিয়ে নিয়েছেন। এখন সমস্যা থাকার কথা নয়। কয়লা পোড়ানো হয়। তবে কালেভদ্রে কাঠ পোড়ে। ভাটা পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অধিদপ্তর কাউকেই অনুমোদন দিচ্ছে না।ভায়না ইউনিয়নের তৈলটুপি গ্রামে রয়েছে একটি মাধ্যমিক ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানের আশপাশেও গড়ে উঠেছে বিশ্বাস ব্রিকস, রুমা, এ জেড ডাবলু, সোহান ও জামাত ব্রিকস। ভাটাগুলোর সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে শত শত মণ কাঠ। পাশেই উঁচু মাটির স্তূপ। প্রশাসনের চোখে ধুলা দিতে সামনে কিছু কয়লাও রাখা হয়েছে। মূলত কাঠ দিয়েই গোড়ানো হচ্ছে ইট।মিঠু নামে এক ভাটা মালিক জানান, প্রতিদিন ৪শ মণ কাঠ জ্বালিয়ে ইট পোড়ানো হয়। এসব কাঠ বরিশাল অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন মালিক বলেন, ছাড়পত্র বা অনুমোদন না থাকলেও সমস্যা হয় না। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই ভাটা চালাচ্ছেন।পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল হোসেন বলেন, অবৈধ ভাটার কার্যক্রম বন্ধে কাজ করতে গিয়ে হামলাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। এর পরও কাজ থেমে নেই।ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাসির রহমান বলেন, গত বছর কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়েছি। সব ভাটা অবৈধভাবে চলছে। কয়েকটির মালিক আদালতে রিট পিটিশন করেছেন। বাকিগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বলেন, যেসব ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, দ্রুত সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।