রাশিয়ার শীর্ষ পর্যায় থেকে আসে তলবের নির্দেশনা


রাশিয়ার শীর্ষ পর্যায় থেকে আসে তলবের নির্দেশনা
মস্কোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে রাশিয়ার শীর্ষ পর্যায় থেকে তলবের নির্দেশনা এসেছিল। দূতকে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রোদেনকো। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে সরকারের ওপর জনগণের চাপের কথাও তুলে ধরেন তিনি।গত ২১ ফেব্রুয়ারি দূতকে তলব করেছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অনুমতি দেওয়ার পরও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের সরঞ্জাম বহনকারী জাহাজ দীর্ঘদিন ভিড়তে না দেওয়ায় আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তলবের সময় তুলে ধরেছে মস্কো। পাশাপাশি রাশিয়ার অসন্তোষের কথাও জানান মন্ত্রী। একই সঙ্গে জাহাজ ভিড়তে না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে কি বাংলাদেশকে তৃতীয় পক্ষ থেকে চাপ দিয়েছে, নাকি স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছে, তা রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছে রাশিয়া।এ বৈঠকে দূতের কাছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী। রুশ জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অবন্ধুসুলভ আচরণে বিস্ময়ের কথা জানান তিনি। রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার যে চুক্তি রয়েছে, জাহাজটি ভিড়তে না দেওয়া সেই চুক্তির পরিপন্থি বলেও জানানো হয়। আর দীর্ঘদিন জাহাজটি সমুদ্রে থাকার কারণে আর্থিক ক্ষতির দিকটিও তুলে ধরেন তিনি। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বাণিজ্যিক দিকটি তুলে ধরেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। আর ইউক্রেন সংকটের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও জানানো হয়। তলব বৈঠকে উত্থাপন করা বিষয়গুলো নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যখন উপমন্ত্রী বলেন- শীর্ষ পর্যায়, তখন বুঝতে হবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের নির্দেশনা।তলবের পরে এক বিবৃতিতে রাশিয়া জানায়, ঢাকার নেওয়া পদক্ষেপটি ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না। এটি সম্ভাবনাময় বিভিন্ন সহযোগিতায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।রাষ্ট্রদূতকে তলব করা প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা রিপোর্টটি পেয়েছি এবং সেখানে রাশিয়ার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে কোনো জাহাজের কথা বলা হয়নি। নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ৬৯টি জাহাজকে কেন বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না সে সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছে মস্কো।মুখপাত্র জানান, রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানান। তিনি এ ঘটনায় রাশিয়ার উদ্বেগের বিষয়টি সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রদূত রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে দেশের অবস্থান তুলে ধরেন। আমাদের যে বার্তা দিয়েছে মস্কো, সেটি বিশ্নেষণ করা হচ্ছে।রাশিয়ার জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন সেহেলী সাবরীন। তিনি বলেন, \'আমাদের বোঝাপড়া এতটাই ভালো, আমরা মনে করি না, জাহাজের একটি বিষয় নিয়ে দু\'দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ যে সম্পর্ক সে ক্ষেত্রে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে।\' তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভূমিকা আছে। জাতিসংঘে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গৃহীত প্রস্তাবে আমাদের পক্ষে রাশিয়ার সমর্থন ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি, তখনও গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে বাংলাদেশ-রাশিয়া একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে আগাম সতর্কতা হিসেবে ৬৯টি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপ কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তারপর আপনাদের জানাতে পারব।উরসা মেজর জাহাজ থেকে মালামাল খালাস হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, এটা আমিও একটি পত্রিকার খবর পড়লাম, মালামালগুলো খালাস করা হয়েছে। এখন মালামাল খালাসের ব্যাপারটা যে মন্ত্রণালয় দেখে তারা ভালো বলতে পারবে, কীভাবে মালামাল খালাস হয়েছে। রাশিয়ার জাহাজগুলোতে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেগুলো আন্তর্জাতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের। বাংলাদেশ কেন এটি মানছে- এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো এ পদক্ষেপ নিয়েছে। উরসা মেজরের পর আরও নিষেধাজ্ঞাবহির্ভূত রাশিয়ার জাহাজ এসেছে। বাংলাদেশ বাণিজ্যনির্ভর দেশ। আমরা বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছি এবং আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেশি।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে মার্কিন সময় বুধবার থেকে আরেকটি জরুরি বিশেষ অধিবেশনে বসেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ইউক্রেন থেকে তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্তভাবে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহার আহ্বান জানিয়ে অধিবেশনে একটি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হবে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার।ইউক্রেন ও তার ৬০ এর বেশি মিত্র দেশের উত্থাপিত এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের ভোট কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা কেবল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ব্যত্যয় না ঘটলে, সেখানে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমরা সাধারণত সেখানে অংশ নিই না। কোনো দেশকে সুনির্দিষ্ট করে রেজুলেশন যখন নেওয়া হয়, সেসব ক্ষেত্রে সাধারণত বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে নিউইয়র্কে রয়েছেন। তিনি সেখানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।