গাজীপুরের ৬ স্থানে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির শঙ্কা


ঢাকা ও গাজীপুর এ দুই জেলার সংযোগ ঘটিয়েছে টঙ্গী সেতু। এ সেতুর দুই দিকেই চলছে র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। তবে এ পথে উড়ালসড়ক নির্মাণ হওয়ায় উপর দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যাচ্ছে। এরপরও গাজীপুর জেলার মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ছয়টি পয়েন্টে (স্থানে) এবার ঈদে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে পবিত্র ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। গাজীপুর জেলায় যানজটের এসব পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলো। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চিহ্নিত পয়েন্টগুলোয় যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যানজটের সম্ভাব্য স্থানগুলো হচ্ছে- গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড, শ্রীপুর উপজেলার মাস্টারবাড়ী বাজার, সিডস্টোর বাজার ও ময়মনসিংহের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড। এ পাঁচটি পয়েন্ট ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের। আর ষষ্ঠ পয়েন্টটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে এখন কাজ চলছে। তবে এখন এ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের ভালুকা পর্যন্ত কোথাও খানাখন্দ বা ভাঙাচোরা নেই। তবে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানো কারণে যানবাহনের জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মহাসড়কের সবচেয়ে ব্যস্ততম পয়েন্ট চান্দনা চৌরাস্তা। প্রতি বছর ঈদ আসলেই সেখানে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। ওই পথে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহণ কর্মীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হয়। চান্দনা চৌরাস্তায় নির্মাণ করা হয়েছে গোলাকার উড়ালসড়ক। ওই উড়ালসড়ক দিয়ে ময়মনসিংহ ও জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াত করা যাচ্ছে। ময়মনসিংহের দিকে যাওয়ার পথে উড়ালসড়কটি সেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে নিচের যানবাহন চলাচলের জন্য জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা গণপরিবহণগুলো সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। এতে উড়ালসড়ক থেকে নেমেই গতি কমাতে হচ্ছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের দিক থেকে যারা ঢাকা বা জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াত করছেন, তাদের পড়তে হচ্ছে যানজটের কবলে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কথা হয় ভিআইপি পরিবহণের চালক মো. আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, চৌরাস্তা এলাকায় উড়ালসড়ক চালু করা হলেও নিচে এখনো বিআরটির কাজ চলমান। আমাদের যাত্রী ওঠাতে হয় তাই নিচ দিয়েই চলাচল করতে গিয়ে যানজটে পড়তে হচ্ছে। নিচের কাজ ঈদের আগে শেষ করা গেলে ভালো হতো। ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপে গাজীপুর মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হোতাপাড়া এলাকায় পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটি বড় পার্শ্ব রাস্তা আছে। বড় বড় শিল্পকারখানার যানবাহনগুলো এসব পার্শ্ব রাস্তা দিয়ে মূল সড়কে প্রবেশ করার ফলে এখানে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, সড়কে অনেক কাজ হচ্ছে কিন্তু সড়কের বেশির ভাগ অংশে নানা ধরনের জঞ্জাল হয়ে থাকে। যেখানে-সেখানে অবৈধ পার্কিং করে রাখা হয়। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এসব পরিষ্কার করতে পুলিশকে কঠোর হতে হবে। ভবানীপুর এলাকায় একটি ইউটার্ন আছে। এই সড়কের সঙ্গে যুক্ত পশ্চিম দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও পূর্বদিকে নলজানি। ইউটার্ন থাকায় স্বল্প দূরত্বের গাড়িগুলো ভবানীপুর চৌরাস্তায় মোড় নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। ফলে ভবানীপুর চৌরাস্তার যানজট প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। ময়মনসিংহ মহানগরের দিকে যেতে যানজটের আরেকটি পয়েন্ট বাঘের বাজার। পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের মূল সড়ক ও পুব দিকে শ্রীপুর সংযোগ সড়ক। দুই পাশের সড়কগুলো ব্যস্ত থাকায় বাঘের বাজারে প্রায়ই যানজট দেখা যায়। ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য এ স্থানটি হতে পারে ভোগান্তির আরেক কারণ। বাঘের বাজারের উত্তরে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় ভয়াবহ যানজটও প্রতিদিনের ঘটনা। পূর্বদিকে শ্রীপুর উপজেলা সদরে যাওয়ার আঞ্চলিক সড়ক। পশ্চিমে লিচুবাগান হয়ে উপজেলার দুখলা গ্ৰামের সংযোগ সড়ক। সড়কের দুই পাশেই বিপুল পরিমাণ কলকারখানা ও ঘনবসতি থাকায় গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়িতে ভয়াবহ যানজট দেখা যায়। মঙ্গলবার বিকাল চারটার দিকে এই পয়েন্টে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা গেছে। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর ও ভালুকা চৌরাস্তা এলাকায় মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে যানজট দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, ভালুকা সদর এলাকায় দুই পাশে দুটি বড় সড়ক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত। আঞ্চলিক সড়ক দুটি মহাসড়কের মতোই ব্যস্ত। ফলে প্রচুর যানবাহনের চাপ লেগে থাকে। এ ছাড়া সিডস্টোর এলাকার চিত্রও প্রায় একই। শিল্প এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র এটি। তাই সারাদিন প্রচুর গাড়ির চাপ থাকে। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশ ও মোবাইল টিম থাকবে। এছাড়া ১০টি রেকার রিজার্ভে রাখা হবে। কোনো কারণে যানবাহনে সমস্যা হলে যাতে দ্রুত সেগুলো সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। মহাসড়কের সবগুলো উড়ালসড়ক আমরা ব্যবহার করব। এ কারণে আশা করছি এবার ঘরমুখো মানুষ আরও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা প্রতি বছরই ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়। কথা হয় কেপি পরিবহণের যাত্রী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ঈদ আসলেই চন্দ্রা এলাকায় যানজটের একটা আতঙ্ক সবার মধ্যে থাকে। এতে যানবাহনের চাপে আমাদের যানজটে পড়তে হয়। আজমেরী পরিবহণের যাত্রী মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ঈদ আসলে চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রা যাওয়ার রাস্তাটির কোনাবাড়ী থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার রাস্তা জ্যাম থাকে; এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। গাজীপুরের নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহদত হোসেন বলেন, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানজট নিরসনে প্রতি বছরের মতো এবারো বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া এপিবিএন থাকবে। চন্দ্রা ত্রিমোড় ছাড়াও আশপাশের বাজার হাইওয়ে রাস্তায়ও অতিরিক্ত পুলিশ থাকবে। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর ঈদযাত্রায় মানুষকে নিরাপত্তা দিতে চন্দ্রা ত্রিমোড়ে একটি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়। সেখান থেকে পুলিশ পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন।