পিকে হালদারকে দেশে ফেরানো অনিশ্চিত


আলোচিত অর্থ পাচারকারী প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারকে গত বছরের ৮ অক্টোবর ২২ বছরের সাজা দেন ঢাকার আদালত। এছাড়াও জরিমানা করা হয় দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। ভারতে কারাবন্দি থাকা পিকে হালদারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইটারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি থাকলেও তাকে দেশে আনা নিয়ে কোনো সুখবর নেই। ভারতের আদালতে বিচারকাজ চলায় তাকে দেশে ফেরানোর বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশ পুলিশের অনুরোধের পর ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ভারতের আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলমান থাকায় তাকে ফেরত আনা যাচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীসহ দুদক কর্মকর্তারা। দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম জানান, পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ আন্তরিক। তার বিরুদ্ধে ভারতে মামলা চলমান থাকায় এখানই তাকে দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তে অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয় উঠে আসার গোপন সংবাদ পেয়েই ভারতে পালিয়ে যান তিনি। সেখানে শিবশঙ্কর হালদার নামে জালিয়াতি করে নাগরিকত্ব নেন। তবে হয়নি শেষরক্ষা। ২০২২ সালের ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট (ইডি)। এরপর থেকেই ভারতের কারাগারে আছেন পিকে হালদার। ভারতে গ্রেফতারের পর দুদক জানিয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব আন্তর্জাতিক আইন ও বন্দিবিনিময় চুক্তির আলোকে পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আদালতে দুদকের সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা যায়, পিকে হালদারের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে বিচারাধীন দুটি মামলার একটিতে গত বছরের ৮ অক্টোবর পিকে হালদারসহ ১৪ জনকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০। একই সঙ্গে জরিমানা করা হয় ১ হাজার ৫২২ কোটি ৫৫ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা। যদিও পিকে হালদারের অনুপস্থিতিতেই এসব মামলা, চার্জশিট ও সাজা দেওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বাধীন একটি টিম পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করে। এর মধ্যে দুটি মামলার বিচার আদালতে চলমান। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ এপ্রিল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ আরেকটি মামলা হয়। এ মামলাটিতে ৪১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার বাদী হয়েছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, অবৈধভাবে ভুয়া কাগুজে প্রতিষ্ঠান কনিকা এন্টারপ্রাইজের নামে ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করে উপস্থাপন ও ব্যবহার করেন পিকে হালদার। পরে এই কাগুজে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৪৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে ৪১ কোটি ৩১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫৭ টাকা আত্মসাৎ করে দেশের বাইরে পাচার করেন তিনি। এ মামলায় পিকে হালদারসহ আসামি করা হয়েছে ২০ জনকে। তাদের সবাই এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিইও, পরিচালক ও বিভিন্ন পদবির কর্মকর্তা। ঘটনার সময়কাল দেখানো হয়েছে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পিকে হালদার যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ লোপাট করেছেন সেগুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে এই চারটি প্রতিষ্ঠান দখলে রেখে পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেন এবং সেই অর্থ দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও এ পর্যন্ত দুদকের ৩৮টি মামলায় পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক সূত্রে জানা যায়, পিকে হালদার নানান কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণ মঞ্জুর করে অর্থের বড় একটি অংশ কানাডা ও ভারতে পাচার করে দেন। ২০১৪ সালে ছোট ভাই প্রীতেশ কুমার হালদারের সঙ্গে পিএন্ডএল হাল হোল্ডিং ইনক নামে কানাডায় একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন তিনি। ২০১৮ সালে দুই ভাই মিলে ভারতে হাল ট্রিপ টেকনোলজি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে সেখানেও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেন। পিকে হালদারকে ফেরানোর বিষয়ে দুদকের কমিশনার জহুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাগজপত্র না দেখে পিকে হালদারকে ফেরত আনার বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব না।