ইফতার-সেহরিতে কী খাবেন


ইফতারের প্রথম খাবার হওয়া উচিত পানীয়। পানীয় নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। আমরা সাধারণত ইফতারে নানা ধরনের শরবত পান করে থাকি। এসব শরবতে থাকে চিনি এবং নানান প্যাকেটজাত ফলের পাউডার। এসব কৃত্রিম উপাদান শরীরের কোনো উপকারে তো আসেই না; বরং সারা দিন রোজা রেখে শরীরের যে উপকারটুকু হয়, দিনশেষে তাও অপকারে পরিণত করি। ইফতারের সময় একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ভরপেট খাবেন না, পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন। পানি ১-২ ঢোক পান করার পর এক গ্লাস ঘরে বানানো ফলের শরবত খেলে শরীর সতেজ হতে শুরু করবে। ইফতারে যা খাবেন খেজুর বা খোরমা দিয়ে ইফতার শুরু করবেন। ইফতারের পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত ৮-১০ গ্লাস পানি না খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই ইফতারের পর পানি পান করার চেষ্টা করুন। সবজি ও ফল খাবেন। ইফতারে রাখবেন আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, খনিজজাতীয় খাবার। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে লাল আটা, বাদাম, বিনস, ছোলা, ডাল ইত্যাদি খেতে পারেন। কলা খাবেন। কারণ একটি কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি থাকে। রোজার শেষে শরীর, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ খাবারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শক্তির যে জোগান চায়, কলা সেটি পূরণ করতে পারে। ইফতারে যা খবেন না অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার ছোলা ভুনা, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, হালিম, বিরিয়ানি ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না। আর ইফতারের পর বেশি দুর্বল লাগলে ডাবের পানি বা স্যালাইন খেতে পারেন। সেহরিতে যা খাবেন ভোর রাতের সেহরি থেকে ইফতারের মাধ্যমে রোজা ভাঙার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয়। তাই সেহরি হতে হবে পরিকল্পিত ও স্বাস্থ্যকর যেন সারা দিন রোজা রাখার শক্তি পাওয়া যায়। বিশেষ করে এবারের কাঠফাটা গরমে আলাদাভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে সেহরির খাবার তালিকার দিকে নয়তো অসুস্থ হয়ে পড়াসহ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়া মোটেও অবাক করার মতো নয়। অনেকেই আবার সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে বলে সেহরিতে যত বেশি সম্ভব খেয়ে নেওয়া যায়, এমন পন্থা অবলম্বন করেন, যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বরং সেহরির খাবার এমন হওয়া দরকার যেন তা সারা দিনের দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে। আবার এত অতিরিক্ত খাওয়াটাও উচিত নয়, যা আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে। ভাত–রুটি সেহরি হচ্ছে রমজানের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাবার। এতে এমন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, যা হজম হতে সময় লাগে এবং দীর্ঘক্ষণ কর্মশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এ কারণে সেহরির খাদ্য তালিকায় শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন খাবার রাখা উচিত। কারণ কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ দেয় এবং খাদ্যে আঁশের চাহিদা জোগায়। বাসায় রাইস কুকার দিয়ে রান্না করা ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, লাল আটার রুটি, আলু, চিড়া, ওটস, সিরিয়াল, বার্লি – এই খাবারগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকে। এ ছাড়া ধীরগতিতে হজম হয় এবং হজম হতে প্রায় ৮ ঘণ্টা লাগে বলে এসব খাবার খেলে দিনের বেলায় কম ক্ষুধা লাগে। তাই সেহরির খাদ্য তালিকার একটা বড় অংশজুড়ে এসব খাবার রাখলে তা আপনাকে রোজার সময়ও সারা দিন সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার সেহরিতে আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাবার থাকলে তা আপনার দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সারাদিন আপনাকে শক্তি জোগাবে। মাছ, মাংস, তরল দুধ, গুঁড়া দুধ, দুধজাত খাবার, ডিম, ডাল প্রভৃতি খাবার প্রোটিনের ভালো উৎস। এ ছাড়া এসব খাবারে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, আয়রন প্রভৃতি পুষ্টি উপাদানও প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা আপনার হাড়ের সুস্থতার জন্য জরুরি। বিশেষভাবে সেহরিতে দুধ আপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হতে পারে। লো ফ্যাট দুধ রক্তের কোলেস্টেরল বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া দুধজাতীয় বিভিন্ন খাবার যেমন ঘরে দই মেকার দিয়ে বানানো দই, ছানা প্রভৃতি কিংবা কলা ও আমসহ দুধভাত রোজার সময়ে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাবে। মাছ বা মাংসের বদলে সেহরির খাবারে একটি ডিম থাকলেও তা আপনাকে প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা পূরণ করতে পারে। তাজা সবজি ভিটামিন শরীরের জন্য খুবই দরকারি একটি পুষ্টি উপাদান। তাজা শাকসবজি দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। তাই সেহরিতে প্রতিদিন সবজি খাওয়া উচিত। তবে রাতের খাবারে অতিরিক্ত আঁশযুক্ত সবজি খাওয়া ঠিক না। কারণ অতিরিক্ত ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি হজমের ঝামেলা করতে পারে। তার বদলে সেহরিতে মাঝারি আঁশের সবজি যেমন ঝিঙে, চিচিংগা, লাউ, পেঁপে, চালকুমড়া, গাজর প্রভৃতি খাওয়াটা বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। সেহরিতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো সেহরির সময় বেশি তৈলাক্ত, মসলাদার এবং ঝাল খাবার খাওয়া উচিত না। সে ক্ষেত্রে সেহরির খাদ্য তালিকা থেকে বিরিয়ানি, পোলাও, তেহারি প্রভৃতি ভারি ধরনের খাবার বাদ দিতে পারেন। কারণ সেহরিতে এসব খাবার খেলে বদহজম, বুক জ্বালাপোড়া করা এবং পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। অনেকেই সেহরিতে কফি মেশিন দিয়ে বানানো চা অথবা কফি খেতে পছন্দ করেন। অনেকে আবার কোকের মতো কোল্ড ড্রিঙ্কস বা বেভারেজ পানীয় খেতে তৃপ্তি পান। কিন্তু এসব পানীয়তে ক্যাফেইন থাকে, যা মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে শরীরের পানির পরিমাণ কমে যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি তৃষ্ণা পায়। তাই সেহরিতে এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। পানিশূন্যতা বাড়ায় বলে সেহরির সময় অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।