চাকরির নামে প্রতারণার ফাঁদে ৭০০ ভুক্তভোগী


নিরাপত্তাকর্মী, কলসেন্টার কর্মী, বিপণন কর্মকর্তাসহ নানা পদে চাকরির বিজ্ঞাপন দেয় চক্রটি। আগ্রহীরা যোগাযোগ করলে প্রথমে তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়। এরপর ফোন করে বলা হয়, আপনি চাকরির জন্য মনোনীত হয়েছেন। পরের ধাপ নিবন্ধন, প্রশিক্ষণসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণে তাদের শেখানো হয় কীভাবে নতুন চাকরিপ্রত্যাশীদের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিতে হবে। আর সেই টাকার একটি অংশ তারাও বেতন হিসেবে পাবেন। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে প্রতারণার এমন কাহিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ঢাকার অফিস ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলায় রয়েছে তাদের মার্কেটিং অফিসার। তারা প্রতিদিন নতুন চাকরিপ্রার্থীদের ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মাঝেমধ্যে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে জামিনে বেরিয়ে তারা নিজেদের ও প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে আবারও একই ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু করে। এ পর্যন্ত ৭০০ জনের বেশি প্রার্থী ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেমরা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস বলেন, ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে এক তরুণী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁকে জানানো হয়, কলসেন্টারে চাকরি দেওয়া হবে, বেতন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। তবে এ জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে তিনি সেই টাকা দিয়ে দেন, তবে চাকরি পাননি। বরং টাকা ফেরত চাইলে তাঁকে হুমকি ধমকি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী এ ঘটনায় ডেমরা থানায় মামলা করেন। এর ভিত্তিতে মঙ্গলবার প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– ড্রিম লাইফ লজিস্টিক সার্ভিস কোম্পানির মালিক সজীব হোসেন, মালিক ও উপপরিচালক ফজলে রাব্বি, প্রশিক্ষক তামান্না ইসলাম, রিসিপশনিস্ট স্বপ্না খাতুন, মার্কেটিং অফিসার মোতাসিম বিল্লাহ ও নাজিম উদ্দিন নয়ন। প্রতিষ্ঠানের আরেক মালিক ও চেয়ারম্যান মারুফ হাওলাদার ওরফে মিজানুর রহমান ওরফে বাবু এখনও পলাতক। মামলার বাদী লাবনী বেগম জানান, তিনি ফেসবুকে ড্রিম লাইফ লজিস্টিক নামক প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে লাইক কমেন্ট করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁকে চাকরির জন্য মনোনীত করা হয়েছে জানিয়ে খরচ বাবদ ৪০ হাজার টাকা চায়। তিনি তা দিয়ে দেন। এরপর চাকরির নিবন্ধনের জন্য খিলগাঁওয়ের প্রভাতীবাগে প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে ডাকা হয়। সেখানে আরও ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে টাকা নেওয়ার পর তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিলাল আল আজাদ বলেন, চক্রটিকে আইনের আওতায় নিতে আমি নিজেই চাকরিপ্রার্থী সেজে যোগাযোগ করি। তারা চাকরি দেওয়ার নামে আমার কাছ থেকেও টাকা নেয়। এরপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য অন্য চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আমাকে জুম অ্যাপের একটি গ্রুপে যুক্ত করা হয়। সেখানে শেখানো হয় কীভাবে কলসেন্টার কর্মীর মতো কথা বলতে হবে। এরপর বলা হয় ছয় হাজার টাকা দিলে একটি রেডিমেট ফেসবুক পেজ দেওয়া হবে। সেই পেজে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে যারা ফোন করবেন, তাদের কৌশলে ফাঁদে ফেলতে হবে। ঘরে বসে নিশ্চিত আয়ের সুযোগ– ইত্যাদি বলে আকৃষ্ট করতে হবে। এরপর একই কায়দায় জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে পরে নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের নামে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।