তারাবির হাফেজদের কদর করুন বারো মাস


আজ থেকে প্রায় ৪৩ বছর আগে যখন প্রথম তারাবি পড়ান তখন হাফেজ মাওলানা কারি কাজী মারুফ বিল্লাহ ছিলেন কোমলমতি ছোট্ট শিশু। ১৯৮১ সাল থেকে শুরু হয়েছে তারাবির সফর। এবার ৪৩তম তারাবি পড়াচ্ছেন তিনি। তারাবির মধুর ও বেদনাবিধুর অভিজ্ঞতায় পূর্ণ তার জীবনের ঝাঁপি। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তারাবির একাল সেকালের নানা প্রসঙ্গ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-আল মামুন দীর্ঘ চার দশক তারাবি পড়াচ্ছেন আপনি। তখনকার তারাবি আর এখনকার তারাবির দৃশ্যপটে কোনো পরিবর্তন দেখছেন? কিছু পরিবর্তন তো আছেই। দেশে হাফেজের সংখ্যা বেড়েছে, মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে। মানসম্পন্ন তেলাওয়াতের প্রতি মুসল্লিদের আগ্রহ জেগেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে মক্কা-মদিনাসহ বিশ্বের বড় বড় মসজিদের তারাবি সম্পর্কে আমরা ধারণা পাচ্ছি। আমরাও সেরকম তারাবি পড়তে ও পড়াতে তাগিদ দিচ্ছি। এটা একটা ইতিবাচক পরিবর্তন। আপনি বলেছেন হাফেজ বেড়েছে, মসজিদও বেড়েছে। জানতে চাই হাফেজদের কদর কি বেড়েছে? একটা সাধারণ সূত্র আছে, কোয়ান্টিটি বাড়লে কোয়ালিটি কমে যাবে। আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ-মাদরাসা বেড়েছে, আলেম-হাফেজ বেড়েছে, কিন্তু আলেমদের প্রতি মানুষ আগে যে ধরনের ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখাত সেটা অনেকটাই কমে গেছে। একজন হাফেজের যে মর্যাদা, তার সুপারিশে অনেক মানুষ জান্নাতে যাবে। একজন আলেম নবির ওয়ারিশ, তার দিকে তাকানো মানে নবিজির দিকে তাকানোর সমান সওয়াব। এ বিষয়গুলো আগে মানুষের মাঝে বেশি প্রভাব ফেলত। এখন এ প্রভাবগুলো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এ জন্য আলেমরাও কম দায়ী নয়। একজন আলেমকে যেভাবে চলতে হবে, একজন হাফেজকে যেভাবে চলতে হবে, সেটা হয়তো সবাই মেনে চলতে পারছে না। সর্বোপরি হাফেজদের কদর এখনো অনেক জায়গায় আগের মতোই আছে। বিশেষ করে যারা দ্বীন সম্পর্কে ভালো বোঝেন তারা হাফেজ, আলেমদের কদর করেন। তারাবি পাওয়া নিয়ে হাফেজরা খুব বিড়ম্বনা পোহাতেন। হালে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি? বিড়ম্বনা সব সময়ই ছিল। হাফেজদের জন্য সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো, সাক্ষাৎকারে প্রথম বিবেচিত হওয়ার পরও মসজিদ কমিটির সুপারিশে দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা সিরিয়ালে নেই এমন কাউকে তারাবির ইমাম হিসাবে নিয়োগ দেওয়া। এটা আগেও ছিল। এখনো আছে। এখন বরং বেড়েছে। এবারও এমন কয়েকজন হাফেজ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন যাদের মসজিদ নিশ্চিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই তাদের নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। শবেবরাতের পর একজন হাফেজকে যদি নিষেধ করে দেয় তাহলে তার জন্য এরচেয়ে বড় বিড়ম্বনা আর কিছু হয় না। তারাবিহীন রমজান একজন হাফেজের জন্য মৃত্যুর যন্ত্রণার সমান বলে মনে করি। হাফেজদের সঙ্গে মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত? একটা সময় ছিল যখন রমজান শেষেও বছরের বিভিন্ন সময় মুসল্লি ও মসজিদ কমিটির লোকজন হাফেজদের খোঁজখবর রাখতেন। চিঠি পাঠাতেন। টেলিফোন করতেন। বাড়ি গিয়ে দেখা করে আসতেন। এখন এ চর্চাগুলোও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো মসজিদ কমিটি ও মুসল্লির ব্যবহার দেখলে মনে হয়, টাকা দিয়ে চাকর রেখেছেন তারা। আসলে হাফেজরা কারও চাকর নয়। তারা টাকার জন্যও তারাবি পড়ান না। তারাবি হলো কুরআন মুখস্থ রাখার একটা সুযোগ। হাফেজরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কুরআন হেফাজতের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাই হাফেজদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা, তাদের প্রতি মহব্বত রাখা কুরআনপ্রেমীদের সহজাত বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত বলে মনে করি।