বই বিক্রি কম, শুধুই ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলা


বসন্ত আর ভালোবাসার দিনে বইমেলায় এসেছিলেন অগণিত মানুষ। প্রেমিক যুগলের হাতে ছিল হাত। শিশুরাও এসেছিল বাবা-মার হাত ধরে। তবে বই বিক্রি বেশ কম ছিল। সবাই ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। কথাপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন লেখক হরিশংকর জলদাস। তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে থাকি। বইমেলায় আসি এক অদ্ভুত ভালো লাগার টানে। কিন্তু ঢাকায় আসার কয়েকদিন পর ঘোর ভাঙে। মেলায় আজকে বসন্ত ও ভালোবাসার দিনে মোটামুটি ধাক্কাধাক্কি করে ভেতরে প্রবেশ করেছি। এত মানুষ। ১০ টাকার গোলাপ নাকি ১০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। আশান্বিত হয়েছিলাম যে আজকে অনেক বই বিক্রি হবে। ভালোবাসা খুব গভীর হোক বা না হোক প্রেমিক বা প্রেমিকা একজন আরেকজনকে বই উপহার দেবেন। কিন্তু সেটি হয়নি। যে দু-একটি প্রকাশনাতে গেছি সবাই বলেছে আজকে বিক্রি সবচেয়ে কম। তবে এতে আমি আশাহত নই। একদিন না একদিন পরিবর্তন হবে।’ আজব প্রকাশের সামনে কবি ও সংগীত গবেষক হক ফারুক আহমেদের তৃতীয় কবিতার বই ‘সবুজ সন্ন্যাস কাল’ এর প্রকাশনা উৎসব হয়। এতে কথাসাহিত্যিক ও কবি শানারেই দেবী শানু, কথাসাহিত্যিক অসীম হিমেল, কবি, লেখক ও সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার, কবি মাহবুব জামিল পুলক, কবি মেহেরুন নাহার মেঘলা প্রমুখ অংশ নেন। সময় প্রকাশন থেকে ঔপন্যাসিক মুহম্মদ মোফাজ্জলের উপন্যাস ‘চাষাভুষার সন্তান’র মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে বুধবার বইমেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে। বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও সায়েন্স ফিকশন লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল উপন্যাসটির মোড়ক উন্মোচন করেন। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, অনুজদের বই পড়া ও লেখা আমাকে অনুপ্রাণিত ও আশান্বিত করে। আশা করি তাদের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’ বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাফাত আলম মিশু। আলোচনায় অংশ নেন সুজাতা হক ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। প্রাবন্ধিক বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছিল জনমানুষের বহুমাত্রিক ঘটনাপুঞ্জের একটি দৃশ্যমান রূপ। আর এই আন্দোলনে যারা ব্যক্তি থেকে সময়ের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন, ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। আশি বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি ছিলেন একাধারে মেধাবী ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী, লেখক, গীতিকার, সুবক্তা ও আইনজীবী। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তার বড় পরিচয় তিনি ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা। গাজীউল হক নিজে লেখক ছিলেন, তাই তার জীবনপাঠের ক্ষেত্রে তার রচনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।’ সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক আমৃত্যু দুঃসাহসী ও দৃঢ় মানসিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাসে তার কর্ম ও আদর্শ চির অম্লান হয়ে থাকবে।’ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, কবি শাহেদ কায়েস, লেখক ও সংগীতজ্ঞ তানভীর তারেক এবং কথাসাহিত্যিক মাজহার সরকার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মারুফুল ইসলাম, মাসুদুজ্জামান, ইসমত শিল্পী ও সাহেদ মন্তাজ। আবৃত্তি করেন মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, মাসুদুজ্জামান ও চৈতালী হালদার। পুথিপাঠ করেন মো. শহিদ ও কুদ্দুস মিয়া। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রফিকুল আলম, খুরশীদ আলম, মামুনুল হক সিদ্দিক, মুর্শিদুদ্দীন আহম্মদ, মো. রেজওয়ানুল হক, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, আঞ্জুমান আরা শিমুল, চম্পা বণিক, শরণ বড়ুয়া ও অনন্যা আচার্য।