যৌন হয়রানির প্রতিকার চাইতে গিয়ে বিপাকে নারী কর্মকর্তা


চলতি বছরের শুরুতে গাজীপুরে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাউবি) যোগ দেন এক নারী কর্মকর্তা। এরপর নিজ প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ সহকর্মীর হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন তিনি। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলে কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ না করে উলটো ওই নারী কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। আর বহাল তবিয়তে আছেন অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা। ৬ মার্চ বাউবি রেজিস্ট্রার ড. মহা. শফিকুল আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে বলা হয়, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের স্বার্থে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (পরীক্ষা) ফারহানা আক্তারকে (ছদ্মনাম) তার বর্তমান কর্মস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বিভাগ থেকে নারায়ণগঞ্জ উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রে বদলি করা হলো। অন্যদিকে যৌন হয়রানির এই ঘটনায় অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার নাম মো. মুজিবুল হক (৫৯)। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২৫ জানুয়ারি ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও নারী নির্যাতন সেলসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীনকে প্রধান করে করেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। লিখিত অভিযোগপত্রে ওই নারী কর্মকর্তা চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই তার অনুমতি ছাড়া দায়িত্ব পালনকালীন তার শরীর স্পর্শ, গায়ে-পিঠে হাত দেওয়া, যৌন হয়রানিমূলক আচরণ, অশালীন কথাবার্তা, চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে অনলাইনে অপপ্রচার চালানো, ইঙ্গিতমূলক মেসেজ দেওয়াসহ বেশকিছু বিষয়ে অভিযোগ জানান। এদিকে ভিকটিম বদলি তার জন্য এক প্রকার শাস্তি উল্লেখ করে বলেন, তিনি সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। হুট করে বদলি করাতে তাকে এখন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে অফিস করে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। নারী হওয়ায় তার সেখানে প্রতিদিন এভাবে যাতায়াত নিরাপদ নয়। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। জানা যায়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা গাজীপুরের স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার ড. শফিকুল আলমের আশীর্বাদপুষ্ট। এছাড়াও এর আগেও তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক নারী কর্মকর্তা বদলি নিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় কার্যালয়ে চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু তখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নারী কর্মকর্তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাউবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে এবং আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ভুক্তভোগী ওই নারী কর্মকর্তার বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এই নারী কর্মকর্তাকে তার পদে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ করেন। বলেন, কী উদ্দেশ্যে ফোন দিয়েছেন।