আজ রাহুল-শশী হেমামালিনীদের ভাগ্য নির্ধারণ


ভারতে অষ্টাদশ সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে আজ। দেশটির ১৩টি রাজ্যের ৮৮টি লোকসভা আসনে ভোট দেবেন প্রায় সোয়া চার কোটি ভোটার। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনি লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন রাহুল গান্ধী, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর, বিদায়ি সংসদের স্পিকার ওম বিড়লাসহ ভারতের একাধিক হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে বলিউডের ড্রিমগার্ল হেমামালিনীর মতো গ্ল্যামার দুনিয়ার মহিরুহ। লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন অ্যানি রাজা, নবনীত রানা, অরুণ গোভিল ও প্রহ্লাদ জোশীর মতো প্রবীণ প্রার্থীরা। ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সময় দ্বিতীয় দফায় ৮৯টি আসনে ভোটগ্রহণের ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের বেতুল লোকসভা আসনে বিএসপি প্রার্থী অশোক ভালভির আচমকা মৃত্যুর কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়। তাই দ্বিতীয় দফায় ৮৮টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। প্রথম দফায় দেশটির ১০২টি কেন্দ্রে ভোট হয় ১৯ এপ্রিল। ভোট পড়েছিল ৬৭ শতাংশ। যদিও পশ্চিমবঙ্গের তিনটি কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল প্রায় ৮১ শতাংশ। এবার দ্বিতীয় দফায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট হচ্ছে রাজ্যের উত্তরাংশের পাহাড়প্রধান এলাকা দার্জিলিং, বালুরঘাট ও রায়গঞ্জে। আর এ তিন কেন্দ্রে ভোটের জন্য ৩৩৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছে নির্বাচন কমিশন। তাৎপর্যপূর্ণ হলো, পশ্চিমবঙ্গে চতুর্থ দফায় আট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য রেকর্ড সংখ্যক ৭৫০ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। দ্বিতীয় দফায় ভারতের যে ১৩ রাজ্যের ৮৮টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে, সেগুলো হলো : ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, কেরালা, আসাম, বিহার, মণিপুর, রাজস্থান, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও জম্মু-কাশ্মীর। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট ২১টি রাজ্যের ১০২টি আসনে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, প্রথম দফা নির্বাচনে পুরো রাজ্যে ৬০ থেকে ৭৯ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারু-এই তিন কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৭৭ শতাংশ। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের চা-বাগানপ্রধান এলাকা জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দাবি করেছেন, এই নারীরা সবাই তার দলকেই ভোট দিয়েছেন। এবার ভারতের লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে সাত দফায়। চলবে প্রায় দুই মাস। ভোটপর্ব শেষ হবে ১ জুন। ৪ জুন ভোটের ফল ঘোষণা হবে। ওইদিন জানা যাবে তৃতীয়বারের জন্য বিজেপির নরেন্দ্র মোদির সরকার ফের ক্ষমতায় আসছে, না রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসবে। দ্বিতীয় দফার ভোটে সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী কেরালার ওয়ানাড় লোকসভা আসন থেকে ফের নির্বাচনে লড়ছেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিপিআই-এর অ্যানি রাজা এবং এনডিএ-এর কে সুরেন্দ্রন। কংগ্রেসের মুকেশ ধানগার উত্তরপ্রদেশের মথুরা লোকসভা আসন থেকে অভিনেত্রী-বর্তমান সংসদ-সদস্য তথা বিজেপি প্রার্থী হেমামালিনীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিদায়ি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা আবারও রাজস্থানের কোটা আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে প্রহ্লাদ গুঞ্জালকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস সংসদ-সদস্য শশী থারুর ফের কেরালার তিরুবনন্তপুরম লোকসভা আসনের প্রার্থী। বিজেপি তার বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে রাজীব চন্দ্রশেখর এবং বামপন্থি পানিয়ান রবীন্দ্রনকে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ২৬৩ কোম্পানি বাহিনী দিয়ে প্রথম দফায় লোকসভা ভোট শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। সংখ্যাটা বেড়েও চলেছে দফায় দফায়। কিন্তু চতুর্থ দফার ভোটে বাংলার জন্য যে পরিমাণ বাহিনী চাইতে চলেছে নির্বাচন কমিশন, তা চমকে দেওয়ার মতো! কমিশন সূত্রে খবর, চতুর্থ দফায় আট কেন্দ্রে ভোট নিতে রেকর্ডসংখ্যক ৭৫০ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোটে ২৬৩ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করেছিল নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় বাহিনীর সেই সংখ্যা ৩৩৪ কোম্পানিতে দাঁড়াচ্ছে। ৭ মে তৃতীয় দফায় চার কেন্দ্রের জন্য আরও প্রায় ৭৫ কোম্পানি বাহিনী আসার কথা জানিয়েছে কমিশন। তবে বুধবার চতুর্থ দফার জন্য বিস্তর হিসাবনিকাশের পর দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ বাহিনীর প্রয়োজনীয়তার কথা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তর থেকে দিল্লির জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে, তাতে চোখ কপালে তুলেছেন অনেকেই। চতুর্থ দফায় সুষ্ঠু ও শান্তিতে ভোট করতে হলে অন্তত ৬০ হাজার অর্থাৎ ৭৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় আধা সেনা মোতায়েন করতে হবে। তৃতীয় দফায় যেখানে ৪০৭ কোম্পানি বাহিনী দিয়েই ভোট নির্বিঘ্নে করতে আত্মবিশ্বাসী কমিশন, সেখানে চতুর্থ দফায় এমন বিপুলসংখ্যক বাহিনী চাওয়া হচ্ছে কেন চতুর্থ দফায় যে আট কেন্দ্রে ভোট হবে, সেখানকার নিরাপত্তাসংক্রান্ত রিপোর্ট এবং অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনি অশান্তির রেকর্ড নিয়ে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে আলোচনায় খতিয়ে দেখার পরই এ রেকর্ড সংখ্যক বাহিনী চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৩ মে চতুর্থ পর্বে দক্ষিণবঙ্গের চার জেলার আটটি আসনে ভোট নেওয়া হবে। এগুলি হলো কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বোলপুর, বীরভূম, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল ও বহরমপুর। এর মধ্যে বীরভূম ও বহরমপুরে অতীতে ভোটের সময় প্রতিবারই অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। সে হিসাবে এ পর্বে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা অনেক।